“ অন্তিম সময়েও অবাক ক্ষুদিরাম “





দেশের জন্য আত্নবলিদানের অগ্নিকুণ্ডে যখন হাজার হাজার তরুণের দল  ঝাপিয়ে পরেছে, তখন বাংলা দেখেছে এক ১৮ বছরের তরতজা প্রানের নিভিক রূপ।বাংলা দেখেছে ক্ষুদিরাম বসুকে।   

জন্মঃ এই বিপ্লবী তরুন ১৮৮৯ সালে মেহিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। ৬ বছর বয়সই বাবা মা দুই জনকে হারিয়েছেন ।তারপর তার লালন পালনের দায়িত্বটা পরে তার বড় বোনের উপর।  

তার নাম রাখার ব্যাপারে  একটা ঘটনা  রেয়েছে। ক্ষুদিরাম জন্মের আগে তার বাবা মার দুই পুত্র সন্তান মারা গিয়েছিল। ক্ষুদিরাম যাতে সুস্থ থাকে তারজন্য তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে ক্ষুদিরামকে তার মাসির কাছে তুলে দেন। খুদের বিনিময়ে সন্তানকে তুলে দাওয়া হয় বলে ছেলের নাম রাখা হই ক্ষুদিরাম।

ক্ষুদিরাম ছোট থাকেই অনেক দানপিটে  ছিলেন। বেশি দূর পর্যন্ত পরাশুনা করতে পারেনি ।মাত্র ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত পরাশুনা করেন।বেশি পরাশুনা না করলেও দুঃসাহসিক কার্যকলাপের প্রতি তার ঝোঁক ছিল।

নিজ দেশের প্রতি মূলত ভালবাসাটা তৈরি হয়েছিল ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ  বিরোধী  আন্দলনের পর। এরপরই তিনি পরাশুনা ছেড়ে সত্যেন বসুর নেতৃত্ব এক গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন। সেখানে তিনি নৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা পেতে থাকেন। এই সময় তিনি পিস্তল চালাতেও  শিখে যান  

বাঙ্গভঙ্গ আন্দলনের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ড এ উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে  আমদানিকৃত লবনের বোঝাই নৌকা ডুবানুর কাজে ক্ষুদিরামের অংশ গ্রহন ছিল অন্যতম। ১৯০৬ সালের মার্চ এর দিকে রাজদ্রোহের কারনে প্রথম পলিশের হাতে ধারা পরলেও  তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।আবার  একই বছর এপ্রিল মাসে তিনি পলিশের হাতে ধারা পরেন। ক্ষুদিরামকে আদালতে পেশ করা হলে তার অল্প বয়সের কারনে তাই মুক্তি পান।


ক্ষুদিরাম মূলত ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন তাই চাইতেন ব্রিটিশ বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোরড কে মারতে চেয়েছিলেন । তাই তিনি প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে গাড়িতে বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোরড আছে ভেবে বোমা ছুড়েন । কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোরড অন্য গাড়িতে বসে ছিলেন ।ফলে ২ জন ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয় তখন যারা ছিলেন মিস কেনেডি ও তার মেয়ে । এই ঘটনার কারনে ক্ষুদিরামকে গ্রেফতার করা হয় । যদিও প্রফুল্ল চাকিকে কগ্রেফতার করতে পারে নি কারন তিনি আগেই আত্নহত্যা করেন ।

ব্রিটিশ মহিলাকে হত্যা করার জন্য চূরান্তভাবে তার ফাঁসির আদেশ হয় । ফাঁসি হয়ার সময় খুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর  ৭ মাস । তাই তাকে ভারতের কনিষ্ঠতম বিপ্লবী বলা হয় ।

ফাঁসির মঞ্চে জহ্লাদকে কি এমন বলেছিলেন যে জহ্লাদও  চমকে গিয়েছিল ?

তার ফাঁসির আগের মুহূর্তগুলো অবাক করে দেওয়ার মত । তার কথোপকথন ও আচার ব্যাবহার দেখে একবার ও মনে হয় নি তার মধ্যে মৃত্যু ভয় কাজ করছে। তার পক্ষের উকিল ছিলেন সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তী । সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তী যখন তাতে জিজ্ঞেসা করলেন “ তুমি কি জানো রংপুর হইতে আমরা কয়েকজন উকিল তোমাকে বাঁচাইতে আসিয়াছি ? তুমি কি নিজের আপন কৃতকারয স্বীকার করিয়াছ ? “
তখন সে সাহসের সাথে বলল “ কেন স্বীকার করব না ?”



১১ আগস্ট, জেলের ভিতরে ১৫ ফুট একটি ফাঁসির মঞ্চ সাজানো । ২ দিকে ২ টি খুটি আর একটি মোটা লোহার রড যা আড়াআড়ি যুক্ত তাঁরই মাঝখানে বাধা একটা দড়ি যার মাথায় একটা ফাঁস । জানা যায় , সেপাইরা তাকে কি টেনে নিয়ে যাবে বরং ক্ষুদিরামই সেপাইদের টেনে যাচ্ছিলো আগে আগে । এর পরে সে সেখানে থাকা সকল আইঞ্জীবিদের দিকে তাকিয়ে হাসে । সে ফাঁসির মঞ্চে দাড়িয়ে নিজেই হাত ২ টি পিছনের দিকে এনে দেয় যেন যেন বেঁধে দেওয়া হয় । জহ্লাদ যখন তাকে গলায় ফাঁসির দড়ি পড়াচ্ছিলেন ক্ষুদিরাম তখন জহ্লাদকে জিজ্ঞাস করলেন “ ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন ?“। এই কথা শুনে জহ্লাদ খুবই বিচলিত আর অবাক হয়েছিলেন।

“ অন্তিম সময়েও অবাক ক্ষুদিরাম “


তার গলায় সবুজ রঙ্গয়ের একটা পাতলা টুপি পরিয়ে গলা পর্যন্ত ঢেকে ফাঁস দেওয়া হয়। ক্ষুদিরাম সোজা হয়ে দাড়িয়েই ছিলেন।যেন কোন ভয় বা আক্ষেপ কিছুই ছিল না তার । যখন ফাঁসির আদেশ হল জহ্লাদ মঞ্চের অন্য প্রান্তের হ্যন্ডেল টান দিল । কয়েক সেকেন্ড কেবল দরিটি নড়তে থাকে । তারপর সব স্থির হয়ে যায় । কিছুখন পরে ২ জন বাঙালি এসে খাটিয়ে করে তাকে নিয়ে যায় । নিয়ম অনুসারে ফাঁসির পর গ্রীবার পশ্চাদ্দিকে অস্রপচার করা হয় , মৃত্যু হয়েছে কিনা । এর পরে সেই যায়গায় আবার সেলাই করে ওই লাশ জেলের বাইরে আনা হয় ।

জীবনের শেষ সময়ে নাকি তিনি ম্যাতসিনী,গ্যারিবল্ডি ও রবীন্দ্ররচনাবলী পড়তে চেয়েছিলেন । ফাঁসির আগের দিন বলেছিলেন “ আগামিকাল আমই ফাঁসির আগে চতুর্ভুজার প্রসাহ খাইয়া বধ্যভূমিতে যাইতে চাই “।

ফাঁসির আগে তার প্রথমে এই ইচ্ছে ছল যে “ তিনি বোমা বানাতে পারেন ,তাই অনুমতি পেলে সবাইকে তা শিখিয়ে যেতে চান “




Post a Comment

0 Comments